বিদেশ থেকে মূল্যবান পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা বিদেশি নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪

বিদেশ থেকে মূল্যবান পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা বিদেশি নাগরিকসহ গ্রেফতার ৪

 

আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন ঢাকা:

 

মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান এলাকায় বসবাসরত একজন নারী (২৬) এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ইনস্টাগ্রাম) এ বিদেশী এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়।

আজ সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, পিপিএম এডিশনাল ডিআইজি, অধিনায়ক, র‍্যাব-১০ জানান

পরিচয়ের একপর্যায়ে বিদেশী ব্যক্তি ১৭/০৫/২০২৩ তারিখ ভিকটিমের ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠিয়েছে বলে জানায় এবং তা এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করার জন্য বলে। তারপরে ১৮/০৫/২০২৩ তারিখ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাস্টমস এর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক মহিলা তাকে জানায় তার নামে একটি অতি মূল্যবান পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে।

পার্সেলটি ডেলিভারি করতে কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০,০০০ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে বলে জানায়। অজ্ঞাতনামা মহিলা কথা অনুযায়ী ভিকটিম অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির দেয়া ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করে।

পরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি পুনরায় ভিকটিমকে জানায় সিকিউরিটির জন্য আরও ৩০,০০০ টাকা জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

ভিকটিম উক্ত মহিলার কথা অনুযায়ী উক্ত একাউন্টে আরোও-৩০,০০০ টাকা পাঠায়। অতপর ভিকটিম পার্সেলর জন্য উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করলে উক্ত মহিলা জানায় তার পার্সেল তার বাসায় পৌঁছে যাবে।

পরবর্তীতে ভিকটিম পার্সেল জন্য যোগাযোগ করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে আরোও ৮,৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠানোর জন্য বললে ভিকটিম তার আত্মীয়দের সাথে বিষয়টি আলোচনা করে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করে।

গতকাল ২৪ মে তারিখ র‍্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধারা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলী থানাধীন শামীমবাগ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিদেশ থেকে অতি মূল্যবান পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ০২ বিদেশি নাগরিকসহ সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ০৪ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃতদের নাম ১। CHARLES IFENNADE UDEZUE (২৭), দেশ- নাইজেরিয়া, ২। FRANK COCO OBIERKS (৩৫), দেশ- নাইজেরিয়া, ৩। শফি মোল্লা (৩৬),জেলা- নারায়ণগঞ্জ ও ৪। মোছাঃ মৌসুমি খাতুন (২৭),জেলা- ময়মনসিংহ, বর্তমান ঠিকানা- সাং- রায়েরবাগ, থানা- যাত্রাবাড়ী, জেলা- ঢাকা বলে জানা যায়।

এসময় তাদের নিকট থেকে ০১টি মোটর সাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৮টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেটে ঘেটে ব্যবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়।

ভিকটিমদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিম’কে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

তারপর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায়। ভিকটিমের অনিচ্ছা সত্তে¡ও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরবতীতে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহন করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।

গ্রেফতারকৃত আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশী নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করে।

গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশী সহযোগিদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতাকরকৃত CHARLES IFENNADE UDEZUE এর নামে পূর্বে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশী সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই এই প্রতারক চক্রের বিদেশী নাগরিকরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাস্টমস্ অফিসার পরিচয় এবং শেষে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত CHARLES IFENNADE UDEZUE, নাইজেরিয়া, ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। মাদক মামলায় তার পাসপোর্ট কোর্ট জব্দ রয়েছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সে পলাতক থেকে কাপড়ের ব্যবসার শুরু করে।

বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করতো এবং বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। সে এই আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে সে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত FRANK COCO OBIERKS (35), নাইজেরিয়া, ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। তারপর সহযোগি CHARLES এর সাথে পরিচয়ে হয়।

পরবর্তীতে CHARLES এর সাথে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে এবং নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। CHARLES, ঈঐঅজখঊঝ এর প্রধান সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত শফি মোল্লা (৩৬) নারায়ণগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। সে বেশ কিছুদিন যাবৎ রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড়ের ব্যবসা করত। উক্ত ব্যবসার সুবাদে তার CHARLES ও FRANK COCO এর সাথে পরিচয় হয়। CHARLES ও FRANK COCO শফি মোল্লার কাছ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করত।

উক্ত ব্যবসার আড়ালে শফি মোল্লা প্রতারক চক্রটির বাংলাদেশী সহযোগি হিসেবে কাজ করত। সে ভিকটিমদেরকে ফোন করে তাদের নামে বিমানবন্দরে পার্সেল এসেছে বলে পার্সেল ডেলিভারি ম্যান চার্জ হিসেবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত মোছাঃ মৌসুমি খাতুন (২৭), ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। গত ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে ছিল বলে জানা যায়। সেখানে কাজ করার সুবাদে সে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন গামেন্টসে দোভাষী হিসেবে কাজ করত।

একপর্যায়ে CHARLES এর সাথে পরিচয় হয়। মৌসুমি উক্ত প্রতারণা চক্রের প্রধান বাংলাদেশী সহযোগি। সে ভিকটিমদেরকে ফোন করে তাদের নামে বিমানবন্দরে পার্সেল এসেছে বলে কাস্টমস চার্জ হিসেবে মোটা অংকের টাকা বিকাশ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নাম্বারে মাধ্যমে সংগ্রহ করত বলে জানা যায়।

 উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

Leave a Reply