সাঁড়াশি অভিযানে রাজধানী হতে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ৩১ জন গ্রেফতার,বিষাক্ত মলম,দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার,র্যাব-১
আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন ঢাকা;
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকায় দীর্ঘদিন পরে ব্যবসা বাণিজ্য সরগরম হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় পবিত্র ঈদু-উল-আযহা’কে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও কিশোর গ্যাং চক্রের তৎপরতা বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ অধিনায়ক জানান,
ঈদু-উল-আযহা উপলক্ষ্যে পশু হাটে কোরবাণীর পশু ক্রয় করার জন্য নগদ টাকা নিয়ে যাতায়াত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করছে।
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে, প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, গাড়ী, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।
বিষয়টি র্যাবের দৃষ্টিগোচর হলে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই এর সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
০৬ জুলাই ২০২২ সন্ধা হতে ০৭ জুলাই ২০২২ ভোর পর্যন্ত পর্যন্ত র্যাব-১ এর কয়েকটি আভিযানিক দল সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য
১) মোঃ বোরহান (২৪),২) মোঃ ইমরান হোসেন (২৫),৩) তুহিন (২২),৪) মোঃ জাহিদুল ইসলাম মাহমুদ (২০) ৫) মোঃ শিপন হুসাইন (২৩),৬) মোঃ আশিকুর রহমান আশিক (২১) ৭) মোঃ শাহ জালাল (২৬), ৮) মোঃ মিরাজ (২১) ৯) নুর নবী (২২),১০) মোঃ আশিক (২০), ১১) মোঃ মেহেদী হাসান হৃদয় (২০),
১২) মোঃ শাকিল (২০),১৩) মোঃ আকবর আলী (২৪), ১৪) মোঃ রাসেল খা (২৪) ১৫) মোঃ রাসেল ব্যাপারী (২৮), ১৬) মোঃ সুজন তালুকদার (২২),১৭) মোঃ বাবুল (২৪),১৮) টুকু মিয়া (২২),১৯) আব্দুল্লাহ (২২),২০) মোঃ ফয়সাল (২৩),২১) জহরুল মিয়া (২০),২২) মোঃ পারভেজ (২৭), ২৩) মোঃ আসিফ (২২), ২৪) মোঃ নিশান উদ্দিন (৩০),
২৫) মোঃ জুয়েল (৩৫),২৬) মোঃ বিজয় হোসেন (১৯), ২৭) আবুল কাশেম (৪০),২৮) মোঃ শফিক উদ্দিন (২৫), ২৯) মোঃ রানা (২৮), ৩০) মোঃ মাহবুব (২৬), এবং ৩১) মোঃ শাকিল শেখ (২৫),’দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এসময় ছিনতাইকারীদের নিকট হতে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ০৮ টি বিষাক্ত মলম, ০১ টি কুড়াল সাদৃশ্য দেশীয় অস্ত্র, ০২ টি লোহার রড, ১১ টি ছুরি, ০৩ টি লোহা কাটার হ্যাকসো ব্লেড, ১০ টি চাকু, ০৪ টি গামছা, ছিনতাইকৃত ১৮ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২,৫০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা কয়েকটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে আসছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে ওৎপেতে থাকে।
সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, বাসযাত্রী, মটরসাইকেল আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না মর্মে জানা যায়।
আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গুলশান এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ বোরহান তার সহযোগী ০৩ জন। বনানী এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা শিপন হুসাইন ও নূর নবী এবং তাদের সহযোগী ০৫ জন।
ভাটারা এলাকার একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাকিল তার সহযোগী ০৩ জন এবং অন্য একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা সুজন তালুকদার তার সহযোগী ০২ জন। বাড্ডা এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগী ০২ জন।
টঙ্গী এলাকার একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ তার সহযোগী ০৩ জন এবং অন্য একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ পারভেজ তার সহযোগী ০২ জন। তুরাগ এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ রানা তার সহযোগী ০২ জন তাদের নির্দেশে ছিনতাই চক্রের প্রতিটি সদস্য বর্ণিত এলাকায় ছিনতাই করে থাকে।
ছিনতাই চক্রের সকলে স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত। তারা প্রত্যেকে মাদকাসক্ত ও দীর্ঘ দিন যাবৎ ডান্ডি, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। তারা কেউ কেউ বাস/লেগুনার হেলপার, ওয়ার্কসপের শ্রমিক, দিনমুজুর, টোকাই, মাছ/কাঁচামালের আড়তে কাজ করে। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছিনতাই করে আসছে মর্মে স্বীকার করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১অধিনায়ক জানান,
উল্লেখ্য যে, রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে ঈদের কেনাকাটা করে নির্বিঘেœ স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারে এ লক্ষ্য নিয়ে ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি এবং মলমপার্টি চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-১ এর সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।