বাংলাদেশ ও পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন
আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন ঢাকা, ০২ জুলাই ২০২২:
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন, এম.পি. পর্তুগাল এবং কেনিয়া যৌথভাবে আয়োজিত চলমান দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন ২০২২-এর মার্জিনে গতকাল (০১ জুলাই ২০২২) পর্তুগিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জোয়াও গোমেস ক্রাভিনহোর সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।
এটি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। দুই মন্ত্রী আগামী দিনে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, পারস্পরিক সুবিধার জন্য বর্তমান সময়ে শক্তিশালী সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের উচিত ইতিহাসের এই ইতিবাচক উত্তরাধিকার গড়ে তোলা। তিনি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ, নীল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ ১০ বছর ধরে লিসবনে একটি আবাসিক বাংলাদেশ দূতাবাস রক্ষণাবেক্ষণ করেছে এবং সম্প্রতি দূতাবাসের স্থায়ী অবস্থানের জন্য লিসবনে সম্পত্তি ক্রয় করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী তার পর্তুগিজ সরকারকে ঢাকায় একটি আবাসিক পর্তুগিজ মিশন বা অন্ততপক্ষে স্থাপন করার বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
ঢাকায় সব ধরনের ভিসার আবেদন গ্রহণের জন্য কিছু ব্যবস্থা এবং ঢাকায় পর্যায়ক্রমিক কনস্যুলার সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি মনে করেন যে পর্তুগালে শিক্ষার্থীদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের সুবিধার্থে এবং বাংলাদেশী অভিবাসীদের পরিবারের সদস্যদের পর্তুগালে তাদের প্রিয়জনদের সাথে পুনর্মিলনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পর্তুগিজ প্রতিপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, সদ্য উদ্বোধন হওয়া বহু বিলিয়ন ডলারের পদ্মা সেতু, যা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী নদীর উপর নির্মিত, নতুন বাংলাদেশের প্রতীক যা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাফল্য অর্জনে সক্ষম।
পর্তুগিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তার সরকারের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পর্তুগিজ সমাজে একীভূত হওয়া এবং পর্তুগিজ অর্থনীতিতে অবদানের জন্য পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশী অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রশংসা করার পাশাপাশি তিনি পরামর্শগুলো নোট করে সেগুলো নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন।
উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক স্তরে "জলবায়ু উদ্বাস্তু" পুনর্বাসনের মতো জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসাথে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
দুই পক্ষই ২০২৪ সালে বাংলাদেশ-পর্তুগাল কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সফর সহ ভবিষ্যত সহযোগিতার এজেন্ডা নিয়েও আলোচনা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশে একটি চ্যান্সারি খোলা হবে সেটি উদযাপনের জন্য পর্তুগিজ পক্ষ থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গি। ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
দুই মন্ত্রী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পর্তুগাল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকর ভূমিকার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্তুগিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা খুশির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন লিসবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব তারিক আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খুরশেদ আলম, বিএন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা।