শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ৭ এপ্রিল।
কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে। পর্যটন নগরীতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে করোনা পরিস্থিতি। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা টেস্টে করে জেলায় গড়ে প্রতিদিন ৪০ জনের অধিক করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৬৮৩৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জন।
এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে কক্সবাজারে করোনা সংক্রামণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সব ধরনের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
কোভিড-১৯ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে জড়িত অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসক জানালেন, হোম আইসোলেসনে যেসব করোনা রোগী আছেন, তারা কতটুকু আইসোলেসন মানছেন-সেটা সুষ্ঠু পর্যবেক্ষনের বিষয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগসহ কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকি থাকতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, করোনা শনাক্ত হওয়া প্রায় ৭৫ শতাংশ রোগী হোম আইসোলেসনে রয়েছেন। অনেক রোগী ‘আইসোলেসন’ কি, সেটাও জানেন না।
আক্রান্তরা অবাধে মিশে যাচ্ছে পরিবারের সদস্য ও গণমানুষের সাথে, পাবলিক স্পেসে। আক্রান্তদের বেশির ভাগের করোনার উপসর্গ না থাকায় সাধারণ লোকজন করোনা রোগীকে চিহ্নিত করতে পারছেন না। করোনা সংক্রামণের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা একেবারে কমে গেছে। এখানে স্বাস্থবিধির কোন বালাই নেই।
এ বিশেষজ্ঞের মতে, আক্রান্তদের অধিকাংশকে সরকারী উদ্যোগেই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নিয়ে আসা দরকার। যারা হোম আইসোলেশনে থাকবেন তাদের যথাযথ সম্পূর্ণ আইসোলেসন সুনিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক টিম আবার কন্ট্রাক ট্রেসিং শুরু করলেও তা আরো জোরদার এবং ব্যাপকতা বাড়ানো দরকার। বৃদ্ধি করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসন সেন্টার।
কক্সবাজার জেলার অন্যান্য জায়গাতেও জরুরী ভিত্তিতে কন্ট্রাক ট্রেসিং শুরু করতে হবে। জেলায় করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষককে সময় থাকতে আরো বেশী তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এই অভিজ্ঞজন।
এদিকে, ৭ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৮৩৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৪ জন করোনা রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতদের মধ্যে ১০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১.২৪%।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. সাকিয়া হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে এই পর্যন্ত সন্দেহজনক করোনা রোগীর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ২৩ হাজার ১৪৮ জনের। এরমধ্যে কক্সবাজার জেলার নাগরিকদের নমুনা ৭১ হাজার ৪১৬ জনের। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নমুনা ৩৪ হাজার ৮৮১ জনের। চট্টগ্রাম জেলার নাগরিকদের নমুনা ১১ হাজার ৯৬ জনের এবং বান্দরবান জেলার নাগরিকদের নমুনা ৫ হাজার ৭৫৫ জনের।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রমক ব্যাধি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাহান নাজির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ইতোমধ্যে ব্যারিকেড স্থাপন করেছে জেলা প্রশাসন’করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সব ধরনের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে। ১ এপ্রিল রাতে এই সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম।
সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে সংক্রমণ রোধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার সকল পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র সমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে।