হালিশহর থানাধীন আগ্রাবাদ এক্সেস রোডস্থ রোজ উড আবাসিক হোটেলে খুন হওয়া অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় শনাক্ত এবং ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামী গ্রেফতার।
সিটিজি ট্রিবিউন চট্টগ্রাম;
চট্টগ্রাম নগরীতে গত ১০/০২/২০২২ তারিখ রাত্রি ১১;১০ ঘটিকার সময় রোজ উড হোটেলের ৮০২ নং কক্ষে একজন অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়, যার গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত ছিল।
হোটেলে রক্ষিত রেজিষ্টার ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায়, ঘটনার জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামী একই তারিখ সকাল ০৮.১৫ ঘটিকার সময় হোটেল রিসিপশনে উপস্থিত হয়ে জনৈক মোঃ কামরুল হাসান এর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উপস্থাপন করে।
বিকাল অনুমান ০৪;১৪ ঘটিকার সময় উক্ত অজ্ঞাতনামা আসামী অজ্ঞাত একজন মহিলাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলের কক্ষে নিয়ে আসেন । বিকাল অনুমান ১৭.৩০ ঘটিকার সময় উক্ত অজ্ঞাতনামা আসামী ৮০২ নং কক্ষের দরজাটি লক করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এক্সেস রোড ধরে পায়ে হেঁটে পূর্ব দিকে চলে যায়। বিকাল ১৭.৩০ ঘটিকা হতে রাত ১১.১০ ঘটিকা পর্যন্ত রুম হতে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ হালিশহর থানায় সংবাদ প্রদান করলে হালিশহর থানা পুলিশ উক্ত মহিলার লাশ উদ্ধার করে আনুষাঙ্গিক কার্যাদি শেষ করে সূত্রে বর্ণিত মামলাটি রুজু করে।
মামলাটি তদন্তকালে রোজ উড হোটেলের রেজিষ্টার, আসামী কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্র, বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ, হোটেল রুমে প্রাপ্ত আলামত পর্যালোচনা করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী আশরাফুল ইসলাম প্রঃ সুজন (২৬),কে শনাক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে ডিসি (পশ্চিম) জনাব মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ এর নির্দেশনায় এডিসি (পশ্চিম) জনাব পংকজ দত্ত এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ১৪/০২/২০২২ তারিখ রাত্রি ০২.০০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার দক্ষিণ গাজীর চট, আয়নাল মার্কেটের নিকটে আসামীর দুলাভাই মোঃ ইউনুছ এর বাসায় আত্মগোপনরত অবস্থায় উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী আশরাফুল ইসলাম প্রঃ সুজন মামলার ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে জানায় যে, সে মা বাবার সাথে উত্তরায় নিজ বাড়ীতে বসবাস করে এবং উত্তরা ল্যাব এইড হাসপাতালে রিপোর্ট ডেলিভারী সেকশনে চাকুরি করে।
ভিকটিম শাহিদা জাহান সুমি (৩৫), স্বামী- জাহাঙ্গীর, পিতা- গোলাম রসুল বাচ্চু,আসামীর গ্রামের বাড়ীর প্রতিবেশী। ভিকটিম তার স্বামী ও ০৩ সন্তানের সাথে বন্দর থানা এলাকার কলসী দিঘীর পাড়ে বসবাস করত।
ভিকটিমের স্বামী ভিকটিমকে বিভিন্ন কারণে সন্দেহ করায় ভিকটিমের সাথে তার স্বামীর দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং ভিকটিম গত ০১ বছর যাবৎ তার ০৩ সন্তান নিয়ে হালিশহর বাবার বাড়ীতে বসবাস করে আসছে। একই এলাকার সুবাদে ভিকটিমের সাথে আসামীর পরিচয় হয় এবং গত দুই বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
সম্প্রতি ভিকটিমের সাথে অন্য কোন ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরী হয়েছে মর্মে আসামী ভিকটিমকে সন্দেহ করত। ইতিপূর্বে গত ২৬/০১/২০২২ তারিখেও ভিকটিম এবং আসামী উক্ত হোটেল রোজ উডে দেখা করেছিল।
ভিকটিমের সাথে আসামীর মনোমালিন্যের কারণে আসামীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং সে ভিকটিমকে খুন করার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী উত্তরা বিভিন্ন দোকান হতে ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি, পানীয়, ঘুমের ঔষধ ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে।
ঢাকা হতে সে বাসযোগে ১০/০২/২০২২ তারিখ চট্টগ্রামে পৌঁছে এবং সকাল অনুমান ০৬.০৭ ঘটিকায় রোজ উড হোটেলে উপস্থিত হয়। বিকাল ০৪.৩০ ঘটিকায় ভিকটিমকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রুমে নেয় এবং ভিকটিমকে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানীয় পান করতে দেয়।
ভিকটিম ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানীয় পান করার ফলে কিছুটা অচেতন হওয়ার পরপরই ছুরি দিয়ে গলা ও পেটে আঘাত করে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং আসামী তার রক্তমাখা জামা কাপড় লাশের পাশে রেখে নতুন জামা কাপড় পরে বিকাল ০৫.৩০ ঘটিকায় রুম বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও তার পরিচয় গোপন করার জন্য আসামী উক্ত হোটেলে অপর ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র, ভূয়া মোবাইল নম্বর উপস্থাপন করে। একই সাথে আসামী চতুরতার সাথে ভিকটিমের কোন জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর বা ঠিকানাও উক্ত হোটেলে প্রদান করেনি।
আবাসিক হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী হোটেলে কর্তৃপক্ষ আসামী কর্তৃক উপস্থাপিত জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই না করায় এবং আসামী ও ভিকটিমের মাস্কবিহীন ছবি সংরক্ষণ না করায় তাৎক্ষণিকভাবে আসামী ও ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সূত্রে উল্লেখিত কু-লেস মামলাটির রহস্য উদ্ঘটন, আসামী ও ভিকটিমের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং আসামী গ্রেফতার সম্ভব হয়। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে।