সিটিজি ট্রিবিউন ডটকম ০৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির অভিষেক রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ হয়, আগুনসন্ত্রাসীদের সাথে নয় : তথ্যমন্ত্রী সিটিজিট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক আয়াজ আহমেদ সানি’র মায়ের মৃত্যু অসুস্থ মায়ের জন্য দোয়া চাইলেন : সাংবাদিক আয়াজ আহমদ সানি অনিয়মের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন বান্দরবান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আত্ন-প্রকাশ আগামীকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আন্তজার্তিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের যৌক্তিকতা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন ঢাকার বাড্ডায় ‘সেলুন পাঠাগার বিশ্বজুড়ে’র বুক সেলফ বিতরণ মা হওয়ার ইচ্ছা ছিল অঙ্কিতার, ‘বিগ বস’-এ ভিকির সঙ্গে অশান্তির পরে কি ভেস্তে যাবে সব? দূর্গাপূজা উপলক্ষে র‍্যাবের রোবাস্ট পেট্রোলিং ও চেকপোস্ট
রাজনীতির সকল সংবাদ ::

পূর্ব শত্রুতার জেরে নবাবপুরে রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ১১ বছর পর র‍্যাব-৩ এর জালে আটক

  • Ayaz Ahmed
  • আপডেট সময় : ০৬:১১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ অগাস্ট ২০২২
  • ৫১৪ বার পড়া হয়েছে

পূর্ব শত্রুতার জেরে নবাবপুরে রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ১১ বছর পর র‍্যাব-৩ এর জালে আটক

 

আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন ঢাকা

 

 

র‍্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ,
অধিনায়ক, র‍্যাব-৩ জানান

যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ০৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং

পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার।

এছাড়াও র‍্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৯ অগাস্ট ২০২২ রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ জিকু (৩২), ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজার, নাসির উদ্দিন সর্দ্দার লেন, কোতোয়ালী, ডিএমপি, ঢাকাকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং আসামী জিকুর বাসা ছিল রায়সাহেব বাজার এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত জিকু দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল।

তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে।

পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি হয়। উক্ত শত্রুতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ,

আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়।

সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়।

বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও একই রায়ে ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।

আসামীর জীবন বৃতান্তঃ ধৃত আসামীর পেশা মটর মেকানিকস। সে ১০ বছর বয়স হতে ধোলাইখাল এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ শিখে। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। তার মাসিক আয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু সে ১৪ বছর বয়সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

তার রোজগারের দুই তৃতীয়াংশ সে মাদকের পিছনে ব্যয় করে। প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাওয়ার পরই সে মাদক ক্রয় করে। যেদিন রোজগার বেশি হয় সেদিন সে বেশি পরিমানে মাদক সেবন করে। ২০০৭ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার ০২ জন কন্যা ও ০১ জন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তার সন্তানেরা তার শ্বশুরবাড়ি বরিশালে লালিত পালিত হচ্ছে।

পলাতক জীবনঃ একদিন এই মাদকই তার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখ হত্যাকান্ডের ঘটনার দিন তারা সকলে মিলে ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু উক্ত ঘটনায় রজব আলী মৃত্যু বরণ করলে ঘটনার পরপরই ধৃত আসামী মাতুয়াইল এলাকায় জনৈক মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যায়।

দীর্ঘ আট মাস পলাতক থাকার পর সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে তিন বছর ছয় মাস জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সে বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় এবং কোর্টে হাজিরা দেওয়া হতে বিরত থেকে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে।

সেখানে নিজেকে মটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে। অদ্যাবধি তার কোন এনআইডি না থাকায় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাসির উদ্দিন নামে নিজেকে পরিচয় দেয়। মটর মেকানিকের কাজ জানায় সে অতি সহজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারত।

সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। এজন্য যেকোন ওয়ার্কশপে তার নাম পরিচয় যাচাই না করেই চাকুরি পেয়ে যেত। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। সে লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশ বদল করে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে।

পলাতক সময়ে সে তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। উক্ত সময়ে তার মাদকাসক্তির পরিমান আরও বাড়তে থাকে। তার রোজগারের সমস্ত টাকাই সে মাদকের পিছনে ব্যয় করতে থাকে। এরপর তার ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে সে মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়। উক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ধৃত জিকুর চুল ও দাড়ি কেটে দেয়।

এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ০৮ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার অস্ত্র মামলায় আসামি গ্রেফতার।

নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণে: জাতিসংঘ

পূর্ব শত্রুতার জেরে নবাবপুরে রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ১১ বছর পর র‍্যাব-৩ এর জালে আটক

আপডেট সময় : ০৬:১১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ অগাস্ট ২০২২

পূর্ব শত্রুতার জেরে নবাবপুরে রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ১১ বছর পর র‍্যাব-৩ এর জালে আটক

 

আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন ঢাকা

 

 

র‍্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ,
অধিনায়ক, র‍্যাব-৩ জানান

যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ০৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং

পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার।

এছাড়াও র‍্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৯ অগাস্ট ২০২২ রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ জিকু (৩২), ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজার, নাসির উদ্দিন সর্দ্দার লেন, কোতোয়ালী, ডিএমপি, ঢাকাকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং আসামী জিকুর বাসা ছিল রায়সাহেব বাজার এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত জিকু দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল।

তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে।

পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি হয়। উক্ত শত্রুতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ,

আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়।

সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়।

বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও একই রায়ে ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।

আসামীর জীবন বৃতান্তঃ ধৃত আসামীর পেশা মটর মেকানিকস। সে ১০ বছর বয়স হতে ধোলাইখাল এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ শিখে। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। তার মাসিক আয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু সে ১৪ বছর বয়সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

তার রোজগারের দুই তৃতীয়াংশ সে মাদকের পিছনে ব্যয় করে। প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাওয়ার পরই সে মাদক ক্রয় করে। যেদিন রোজগার বেশি হয় সেদিন সে বেশি পরিমানে মাদক সেবন করে। ২০০৭ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার ০২ জন কন্যা ও ০১ জন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তার সন্তানেরা তার শ্বশুরবাড়ি বরিশালে লালিত পালিত হচ্ছে।

পলাতক জীবনঃ একদিন এই মাদকই তার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখ হত্যাকান্ডের ঘটনার দিন তারা সকলে মিলে ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু উক্ত ঘটনায় রজব আলী মৃত্যু বরণ করলে ঘটনার পরপরই ধৃত আসামী মাতুয়াইল এলাকায় জনৈক মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যায়।

দীর্ঘ আট মাস পলাতক থাকার পর সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে তিন বছর ছয় মাস জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সে বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় এবং কোর্টে হাজিরা দেওয়া হতে বিরত থেকে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে।

সেখানে নিজেকে মটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে। অদ্যাবধি তার কোন এনআইডি না থাকায় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাসির উদ্দিন নামে নিজেকে পরিচয় দেয়। মটর মেকানিকের কাজ জানায় সে অতি সহজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারত।

সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। এজন্য যেকোন ওয়ার্কশপে তার নাম পরিচয় যাচাই না করেই চাকুরি পেয়ে যেত। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। সে লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশ বদল করে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে।

পলাতক সময়ে সে তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। উক্ত সময়ে তার মাদকাসক্তির পরিমান আরও বাড়তে থাকে। তার রোজগারের সমস্ত টাকাই সে মাদকের পিছনে ব্যয় করতে থাকে। এরপর তার ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে সে মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়। উক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ধৃত জিকুর চুল ও দাড়ি কেটে দেয়।

এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ০৮ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।