জামালপুরের চাঞ্চল্যকর মৌসুমী আক্তার নার্গিস হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটিত (পিবিআই)
আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন;
জামালপুর জেলাধীন মেলান্দহ থানার চাঞ্চল্যকর অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় সনাক্ত এবং হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করল পিবিআই জামালপুর। মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। হসান (২২),কে গত ০৩/০২/২০২২ তারিখ রাত ০৯.০০ টায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ইসলামপুর থানাধীন নাপিতেরচর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
০৬।০২।২০২২ তারিখে সকাল ০৮.৩০ মিনিটে সংবাদ পাওয়া যায়,জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানাধীন দাউদপুর সাকিনস্থ জামালপুর-ইসলামপুর রোডের পার্শ্বে একটি অজ্ঞাতনামা মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার, পিবিআই জামালপুরের নির্দেশে পিবিআই, জামালপুরের একটি ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট টিম তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
সকাল ০৯.৩৫ মিনিটে জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানাধীন দাউদপুর সাকিনস্থ জামালপুর-মেলান্দহ রোডের পূর্বপার্শ্বে জনৈক মোঃ আব্দুল মোতালেব, পিতা-মৃত অছিম উদ্দিন এর ব্রিক্স ফিল্ডের পশ্চিমপার্শ্বে পতিত জমিতে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মৃত দেহটি অজ্ঞাতনামা মহিলা (২০), উচ্চতা অনুমান ৫ ফুট, গায়ের রং শ্যামলা, চুলের রং কালো, লম্বা অনুমান ১.৫ ফুট।
স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মৃতদেহটি উলট পালট করিয়া দেখা যায় যে, তার মাথার বাম পাশে ধারালো অস্ত্রের রক্তাক্ত জখম রয়েছে, মুখমণ্ডলে আচড়ের দাগ রয়েছে, গলা, কাঁধ, বুক, পেট ও পিঠে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ দেহের পাশে লম্বালম্বি অবস্থায় আছে, গোপন অঙ্গে ও মলদ্বারে কোন কিছু নির্গত হয় নাই।
মৃতদেহের পরিচয় সনাক্তকরণের জন্য মৃতের আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি সংগ্রহপূর্বক পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকায় প্রেরণ করিলে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স উক্ত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় মৌসুমী আক্তার নার্গিস (জন্ম তাং-২৪/১২/২০০২),জানান। এ সংক্রাে মেলান্দহ থানার জিডি মূলে মেলান্দহ খানা পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।
মামলার ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার, পিবিআই জামালপুর মহোদয়ের সার্বিক তদারকিতে পিবিআই জামালপুরের একটি আভিযানিক দল তাত্ক্ষণিকভাবে মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ভিকটিমের সাবেক স্বামী হিদ হাসান (২২), কে গত ০৩/০২/২০২২ তারিখ রাত ০৯.৩০ ঘটিকায় জামালপুর জেলার ইসলামপুর ঘানাধীন নাপিতেরচর এলাকা হতে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী জাহিদ হাসান (২২)-কে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অস্ত্র খুনের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, ভিকটিম মৌসুমী আক্তার নার্গিস এর সাথে অনুমান ০৭ মাস পূর্বে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন চেরাগআলী দত্তপাড়া এলাকায় পরিচয় এবং একপর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তারা ০৫ মাস স্বামী হিসাবে ঘর সংসার করে। বিগত ০১ মাস পূর্বে ভিকটিম মৌসুমী আক্তার নার্গিস আসামী জাহিদ হাসানকে তালাক দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আসামী জাহিদ ভিকটিমের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যহত রাখে এবং ভিকটিমকে পুণরায় তার স্ত্রী হিসাবে ঘরে নিয়ে আসার জন্য নানা ভাবে ফুসলাইতে থাকে।
তৎপ্রেক্ষিতে গত ০১/০২/২০২২ তারিখ আসামী জাহিদ হাসান ইসলামপুর হতে কমিউটার ট্রেন যোগে রাত্রী অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় জয়দেবপুর স্টেশনে নামে এবং স্টেশনেই রাত্রী যাপন করে।
গত ০২/০২/২০২২ তারিখ সকাল ১০.০০ টায় ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে আশুলিয়া জিরানী বাজারে গিয়ে ভিকটিমের সাথে দেখা করে এবং সকাল অনুমান ১১.০০ টার দিকে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাসযোগে টাঙ্গাইল হয়ে রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকায় জামালপুর বাস স্ট্যান্ডে নামে এবং অটোযোগে মেলান্দহ থানাধীন দাউদপুর সার্কিনস্থ ডেষণা ব্রিজের কাছে নিয়ে যায় এবং পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের মাথায় লোহার রড ও ইট দ্বারা আঘাত করে হত্যা করে লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি, জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, বাংলাদেশ পুলিশ মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, জামালপুর জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব এম. এম. সালাহ উদ্দীন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঘটনার তদন্তে জানা যায় যে, দাম্পত্য কলহ, পারস্পারিক অবিশ্বাস এবং ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ভিকটিমের সাবেক স্বামী জাহিদ হাসান উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত করেছে।
এই বিষয়ে পিবিআই জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার এম. এম. সালাহ উদ্দীন বলেন যে, অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত বর্ণিত জাহিদ হাসান (২২),ছাড়াও অত্র খুনের ঘটনার সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।