দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয় দেওয়া অপরাধীরা। এসব সোর্স জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধেও। অপরাধীদের ধরতে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা অঘোষিত নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করলেও কমছে না অপরাধ। আবার অপরাধী ধরাতে গিয়ে এসব সোর্স নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। বাড়তি ঝামেলায় জড়ানোর ভয়ে কেউ প্রতিকার চাচ্ছে না পুলিশের কাছে। হয়রানি শিকার হয়েও নীরব থাকাকেই ভালো মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে, বিভিন্ন থানা এলাকার কথিত সোর্সদের ‘ভয়াবহ’ অপরাধের কাহিনী। যা আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করে সচেতন মহল।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ সোর্সদের সরাসরি জড়িত থাকার ঘটনায় নগরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নগরের চকবাজার, চান্দগাঁও, সদরঘাট, ইপিজেড, ডবলমুরিং থানাসহ আরও কয়েকটি থানায় কথিত সেই সোর্সদের দৌরাত্ম্যে স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব সোর্সের ভয়ে আতঙ্কে দিন পার করতে হয়।
এদেরই একজন লম্বা নাছির। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এসব মামলা থেকে বাঁচতে তিনি রাতারাতি বনে যান পুলিশের সোর্স। নগরের বহদ্দারহাট, কালামিয়া বাজার ও চকবাজার এলাকার মানুষ তাঁর নাম শুনলেই ভয়ে কেঁপে উঠেন। সন্ত্রাসী থেকে পুলিশের সোর্স হয়ে উঠার তাঁর গল্পটাও অন্যরকম।
২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার সুপারিওয়ালাপাড়ায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে প্রধান আসামি চান্দু মিয়া এলাকায় পরিচিত ‘পুলিশের সোর্স’ হিসেবে।
একই থানা এলাকায় একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করেন ড্রাইভার আইয়ুব আলীকে। তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিকশায় লালখানবাজার থেকে বারিক বিল্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাতে ঘরে। এরপর মারা যান ড্রাইভার আইয়ুব। এ ঘটনায় আটক হন পাঁচজন। এদের মধ্যে বাবু নামে এক আসামি সদরঘাট থানা পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি মাদারবাড়ি এলাকায় মুন্না নামের এক গাড়িচালকের মোবাইল ছিনিয়ে নেন বাবু। এরপর স্থানীয়রা বাবুকে মারধর করে উদ্ধার করে মোবাইল। কিন্তু সদরঘাট থানার এসআই মাহতাব উল্টো ঘটনার শিকার মুন্নাকে হয়রানি করেন। পুলিশের ভয়ে মুন্না এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন অনেকদিন।
তবে সিএমপির এক জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তা সিটিজি ট্রিবিউনকে বলেছেন, নগর পুলিশের সোর্স নামে কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। সোর্স পরিচয় দিলেই পুলিশকে খবর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।একাধিক সূত্র জানায়, তথ্য পাওয়ার জন্য সোর্স নামধারী এসব অপরাধীর সঙ্গে খাতির করে পুলিশ। অসাধু পুলিশের কাছে এ সোর্সরাই আবার ‘সোনার ডিমপাড়া হাঁস’। তাদের মাধ্যমেই ‘টার্গেট’ করা ব্যক্তি থেকে ‘আটক বাণিজ্যের’ নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। আর টাকা দিতে রাজি না হলে জড়িয়ে দেওয়া হয় মামলার জালে।
গেলে রাতে নিজ বাসা থেকেই মারুফের ‘ঝুলন্ত লাশ’ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে সাদা পোশাকে অভিযানে যাওয়া এসআই হেলাল উদ্দিনকে পরে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
জানা গেছে, সেদিন এসআই হেলালের সঙ্গে যাওয়া দুই সোর্সের মধ্যে সুপারিওয়ালাপাড়ায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আটক চান্দু মিয়াও ছিলেন।
এসব ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম জোন) আবদুল ওয়ারীশ সিটিজি ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা নিজেদের বাঁচাতে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকেন। যারা এমন পরিচয় দেন তাদের বিষয়ে তথ্য জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটিজি ট্রিবিউন এর নিয়মিত অনুসন্ধানে বিশেষ প্রতিবেদন আসছে সোর্স জাহাঙ্গীর ওরফে আকাশ এর অপকর্ম।