কোডার্সট্রাস্ট এখন চট্টগ্রামে এসেছে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এটা আনন্দের : শিক্ষামন্ত্রী
আয়াজ সানি সিটিজি ট্রিবিউন জুন ১৩, ২০২৩, চট্টগ্রাম:
বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্মকে দক্ষ ও ডিজিটাল কর্মশক্তিতে রূপান্তরকরতে ‘কোডার্সট্রাস্ট‘ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নতুন প্রজন্মকে দক্ষমানুষ হিসেবে গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে, তাদেরকেপরিবর্তনশীল পৃথিবীতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার যোগ্য করে তুলতে কাজকরছে প্রতিষ্ঠানটি।
‘ এ কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। চট্টগ্রামেকোডার্সট্রাস্টের ক্যাম্পাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যরাখছিলেন তিনি।
ডা. দীপু মনি বলেন, কোডার্সট্রাস্ট এখন চট্টগ্রামে তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়েএসেছে। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এটা আনন্দের বিষয়।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলে এইউদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগ্রাবাদের ক্লিফটন প্লাজায়এই দিন চালু করা হয় কোডার্সট্রাস্টের চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস।
বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেশিক্ষামন্ত্রী বলেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় জরুরি একটি বিষয় এই তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা। কোডার্সট্রাস্ট সেই সুযোগই এখানে সৃষ্টি করছে। এখানেকেউ টেকনোলজি নিয়ে কাজ করবে, কেউ রোবটিক্স আবার কেউসাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করবে।“
“বলতে গেলে চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যেসব কাজ আছে প্রায়ই সব কাজেদক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কোর্ডার্স ট্রাস চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমেবাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার দরজা প্রায় খুলে যাচ্ছে।যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী,” মন্তব্য ডা. দীপু মনির।
কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও পুরস্কারজয়ীআইটি উদ্যোক্তা আজিজ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষঅতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশআওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, এমপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান এনডিসি ওচট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
উদ্বোধনী কর্মসূচিতে ইউনিভার্সিটি ফর পিস, সিম্পলিলার্ন, ডিসকভারিএডুকেশন, থিম্বলর মতো কোডার্সট্রাস্টের আন্তর্জাতিক পার্টনারদেরকার্যক্রম তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোডার্সট্রাস্টের অ্যাফিলিয়েশনের ঘোষণা দিয়েবলেন, এই যে সম্পর্ক কোডার্সট্রাস্ট গড়ে তুলেছে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্যঅনেক উপকারে আসবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরএকটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নকরছে। বলতে গেলে পুরো বাংলাদেশের মানচিত্রেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়দখল করে আছে।
এদের যদি স্কিল বাড়ানো যায় তাহলে একবার ভেবেদেখুন বাংলাদেশের চিত্র কিরকম পরিবর্তন হবে। তাই এসব বিশ্বমানেরকোর্সগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক শিক্ষার্থীদেরজন্য অনেক বড় সুযোগ। কর্মসংস্থানসহ দেশ গড়ার সুযোগ।
বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেঅভাবনীয় অগ্রযাত্রা হুট করে আসেনি। দেশ আজ ডিজিটাল।
আজসবার হাতে হাতে মোবাইল। আমাদের জীবনের একটি অনেক বড় অংশডিজিটাল প্রযুক্তি দখল করে আছে। এ অবস্থায় সবাইকে প্রযুক্তির সাথেতাল মিলিয়ে চলতে হলে দক্ষ হতে হবে।
ডিজিটাল অগ্রগতি খাতে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সে জন্যশিল্পপতিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, গবেষণায় বিনিয়োগই পারবে এই অগ্রযাত্রাকে একটি স্থায়ী রূপ দিতে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আজিজ আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়েরসর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পরেও অনেকের চাকরি পেতে ৩ থেকে ৫ বছরপর্যন্ত লেগে যায়। কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল স্কিলস দিয়েই আমরা তাদের দ্রুত কর্মবাজারে নিয়ে যেতে পারছি।
এছাড়া যারা এরই মধ্যে কর্মজগতে রয়েছে, তাদেরও প্রতিনিয়ত নতুনদক্ষতা নিতে হয়, বর্তমান দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে হয়, প্রতি ৫বছরে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ মানুষকেই নিজেকে নতুন করে নতুন কিছুতেদক্ষ হতে হয় কর্মবাজারে টিকে থাকার জন্য। এগুলো না হলে আমাদেরপিছিয়ে পড়তে হবে, উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং বর্তমানেস্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যাত্রায় এই ডিজিটাল দক্ষতাই সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ বিষয় এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন,কোডার্সট্রাস্টেরমাধ্যমে আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টের আন্তর্জাতিক পার্টনার প্রতিষ্ঠান থিম্বল এরসিইও অস্কার পেড্রোসো বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে লেখাপড়া করারসময়ে রোবটিকস শেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, কোডার্সট্রাস্টের সাথে কাজ করে বাংলাদেশেও আমরা স্কুল পর্যায়েশিক্ষার্থীদের রোবোটিক্স ও বিজ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতেচাই।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানবলেন, ‘কোডার্সট্রাস্ট তরুণ প্রজম্মকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে দৃঢপ্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামে একটি ক্যাম্পাস হচ্ছে এটা বেশআনন্দের সংবাদ।‘
ওয়াসিকা আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অনেক প্রতিকূলতারমধ্য দিয়ে। গত ১৪ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। দারিদ্র কমেছে, শিক্ষারহার বেড়েছে। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১ শতাংশ। যাএখন ১৭ শতাংশ। তিনি বলেন, এই ১৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশেপৌঁছাতে কোডার্সট্রাস্ট সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে।বাংলাদেশের যে উন্নয়নের অভিযাত্রা সে জায়গায় আমাদের সবাইকেএকসাথে কাজ করা দরকার।‘
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আখতার বলেন , ‘আমাদেরশিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। স্কিল না থাকায় অনেকেই আশানুরূপচাকরি পায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাইবো আমাদের ছেলেমেয়েরা আইটি সেক্টরে নি্জেদের স্কিল বাড়িয়ে এগিয়ে যাক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যেমে তাদের স্কিলডেভলপমেন্ট নিশ্চিত করতে পারবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন উপাচার্যড. শিরীন আখতার।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তথ্য ওপ্রযুক্তি নিয়ে আমাদের যে ভাবনা তার আমূল এবং বিপ্লবী পরিবর্তনদরকার। দেশকে ডিজিটাইলাইজড ভাবে সমতায় আনতে গেলে শিক্ষা ওপ্রযুক্তি খাতকে উন্নত করে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞানমনস্কক ওধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।‘
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোডার্স ট্রাস্টের এফিলিয়েশনের কথাজানিয়ে তিনি বলেন, কোডার্সট্রাস্টের সাথে আমরা কাজ করতে চাই।আমাদেরে মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির ফলে এখন থেকেআমাদের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণএবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে কাজ করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা জ্ঞান, বিজ্ঞান চর্চার একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। কোভিড আমাদেরকেদেখিয়ে দিয়েছে সময়ের প্রয়োজনে কীভাবে পরিবর্তন হতে হয়ে। স্কিলবাড়াতে হবে। স্কিল ছাড়া কিছুই করা যায় না।’ চট্টগ্রামে ক্যাম্পাস গড়েতোলার জন্য কোডার্সট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ওডিজিটাল দেশে পরিণত করবেন। সেই উদ্দেশ্যে নিয়ে আমরা সবাইএকত্রিত হয়ে কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা হিসেবেচট্টগ্রামকে তৈরি করা হচ্ছে।‘
চট্টগ্রামে রোবটিক্স ও সাইন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে জানিয়ে জেলাপ্রশাসক বলেন, এখন নতুন নতুন স্কিল প্রয়োজন আমাদের শিক্ষাকার্যক্রমে। যা কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে করা সম্ভব।
কোডার্সট্রাস্টের প্রশিক্ষণের সুযোগগুলো চট্টগ্রামের ইউনিয়ন পর্যায়েপৌঁছিয়ে দিতে চাই,’ বলেন জেলা প্রশাসক।
কোডার্স ট্রাস্টের চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে শুরু হওয়া একাউন্টিং ম্যানেজমেন্টসিস্টেমের অফলাইন কোর্সে ওপেনিং ব্যাচে প্রথম ১০০ জনরেজিস্ট্রেশনকারী পাচ্ছেন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত স্কলারশিপ। এর মধ্যে ১০জন পাবেন ফুল–ফ্রি স্কলারশিপ, অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে কোডার্সট্রাস্ট ।
এছাড়াও অন্যন্য কোর্সের মধ্যে থাকছে গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রফেশনালগ্রাফিক্স ডিজাইন, একাউন্টস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম, এ্যাডভান্সডএক্সেল, ভিডিও ইডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং, পাইথন, ওয়েব ডিজাইন, এডভান্সড ওয়েব ডেভলভমেন্ট ও এন্ড্রয়েড অ্যাপডেভলপমেন্ট।